অন্য সাহারার গল্প


আট বছর হয়ে গেল। সাহারার কোনো বিরতি নেই। প্রতিদিনই যেন একই রুটিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওয়া, এরপর মায়ের হাতে নাশতা খেয়ে সোজা শুটিং স্পট। অবশ্য আউটডোর থাকলে এ রুটিন আংশিক পরিবর্তন হয়। হয় মাকে যেতে হয় সঙ্গে, নইলে কয়েক দিনের রান্না করে মেয়ের সঙ্গে দিতে হয়। এ যেন মায়ের কাছে সাহারার নীরব আবদার। মা-ও প্রথম প্রথম একটু অধৈর্য হতেন। এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। দিনের পর দিন এভাবে চলছে। মেয়ের উচ্ছল অতীত ভুলে তাই বর্তমান ব্যস্ততাকে সহজভাবেই মেনে নিয়েছেন মা। কিন্তু কে জানত, সাহারার শারীরিক অসুস্থতা মা-মেয়ের হারানো নষ্টালজিয়াকে পুনরায় জাগিয়ে দেবে। মনে করিয়ে দেবে হারানো সোনালি দিনের কথা! যে মেয়েটা পায়ে নূপুর পরে সারাক্ষণ এ ঘর ও ঘর করে বেড়াত, মাথায় করে রাখত পুরো পরিবারকে, একের পর এক আবদারে পাগল করে তুলত বাবাকে; তিনিই কি না এখন কাজের চাপে ভুলে আছেন সব। কিছুদিন ধরে মা ভাবছিলেন, কয়েক দিনের জন্য বিশ্রাম নিতে বলবেন মেয়েকে। কিন্তু বলি বলি করেও বলা হচ্ছিল না। সাহারা আবার যদি কিছু মনে করে!

ঈদের পাঁচ দিন আগের কথা-এফডিসিতে শাহীন-সুমনের 'সন্তানের মতো সন্তান' ছবির শুটিং করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সাহারা। এরপর ইউনিটের সবাই দ্রুত তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। খবর দেওয়া হলো তাঁর মাকে। সাহারার মা হাসপাতালে গিয়ে দেখলেন, আদুরে মেয়েটির শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। চোখ দুটি ছল ছল করছে। এখুনি বুঝি বৃষ্টি ঝরবে। হাসপাতালেই মেয়েকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন তিনি। মা-মেয়ের এমন পাগলামি দেখে ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে ইউনিটের সবাই হতবাক! ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে জানা গেল, জলবসন্ত হয়েছে সাহারার। সেরে উঠতে সময় লাগবে দুই সপ্তাহেরও বেশি। আর এ সময়টুকু সম্পূূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে তাঁকে। ডাক্তারের কথা শুনে মুষঢ়ে পড়লেন সাহারা। বিশ্রামে থাকা মানেই তো এ মুহূর্তে 'আমি নাম্বার ওয়ান', 'সন্তানের মতো সন্তান', 'মাই নেম ইজ সুলতান'সহ আরো চার-পাঁচটি ছবির ইউনিটকে বসে থাকতে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর সঙ্গে প্রতিটি ছবির সহ-অভিনেতা শাকিব খান। পরে তো প্রযোজক-পরিচালকরা শাকিবের শিডিউল নিয়েও ঝামেলায় পড়ে যাবেন। কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিলেন না সাহারা। মা কিন্তু মনে মনে খুশিই হলেন। কত দিন পরে মেয়েটা তাঁর কোলে মাথা রেখে ঘুমাবে, এটা-ওটা আবদার করবে!

মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন তিনি। অনেক দিন পর সাহারাও যেন খুঁজে পেলেন আপন পৃথিবী। পুরো দুই সপ্তাহ মুখ গুঁজে থাকলেন মায়ের বুকে। এই দুই সপ্তাহ বাইরের কোনো বিষয় নিয়েই মাথা ঘামাননি তিনি। ঈদে মুক্তি পাওয়া ছবি দুটি নিয়েও কোনো রকম চিন্তা করেননি। মোবাইল ফোনটাও ছিল বন্ধ। দেখতে দেখতে কেটে গেল দুটি সপ্তাহ। এখন খানিকটা সুস্থ তিনি। তাই প্রযোজক-পরিচালকরাও আবার শিডিউলের জন্য দারস্থ হয়েছেন। কিন্তু এ কয়েক দিনে মায়ের ভালোবাসা পেয়ে যেন ভুলতে বসেছিলেন, তাঁর জন্য কেউ অপেক্ষা করতে পারে গোটা ইউনিট নিয়ে। অনেক দিন বন্ধ রাখা ফোনটিও বেজে উঠল। সাহারা নিজেই ফোন রিসিভ করলেন। অন্য পাশ থেকে পরিচালক এফ আই মানিক বললেন, 'সাহারা, তুমি সময় মতো চলে এসো। আমরা তোমার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করব। ঠিক দুপুর ১২টায় ফ্লাইট।' সাহারার দুই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। মায়ের দিকে অসহায়ভাবে তাকালেন। মায়ের আদর আর ভালোবাসার গণ্ডি ছেড়ে বাইরে যেত মন চাইছে না কিছুতেই। অথচ শুটিং পড়েছে সেই ব্যাংককে। ওখানে 'মাই নেম ইজ সুলতান' ছবির শুটিং করতে হবে টানা এক সপ্তাহ। এরপর দেশে ফেরা।

No comments:

Post a Comment