বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র 'মুখ ও মুখোশ'র অভিনেতা সাইফুদ্দিন তার চিরচেনা এফডিসি ঘুরে গেলেন সোমবার বিকালে। জীবনের দীর্ঘ ৫০টি বছর চলচ্চিত্র অঙ্গনে ব্যস্ত পদচারণা করে জীবন সায়াহ্নে এসে এফডিসি'র পরিচিত প্রাঙ্গণে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে নিজের মনে কথা বলে গেলেন তিনি। কি যে বললেন আর কি যে বোঝাতে চাইলেন তা শুধু তিনি নিজেই বুঝলেন। বুঝলো না তার আশপাশে থাকা নতুন পুরনো শিল্পী আর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ৮২ বছর বয়স্ক এই মানুষটি এখন চোখেমুখে উজ্জ্বল হাসি নিয়ে কেবলই চেয়ে থাকেন আর মাঝে মাঝে নিজের মনে কথা বলেন। গত কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি কানে কম শুনতেন। এখন পুরোই শুনেন না। সঙ্গে আসা সহধর্মিণী সুফিয়া আহমেদ জানান, গত বছরের আগস্ট থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি সিএমএইচ-এ ভর্তি হয়েছিলেন কফ ও পায়ে পানি এসে যাওয়ার কারণে। হাসপাতাল থেকে আসার পর তার মস্তিষ্ক এখন খুবই কম কাজ করছে বলে তার সহধর্মিণী জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, গত কিছুদিন ধরে এফডিসিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করছেন। এজন্যই আসা। এফডিসিতে সাইফুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ছাড়াও এসেছেন তার ছেলে। তিনি আসার ঘণ্টা দুয়েক পর তার মেয়ে ও মেয়ের জামাইও এফডিসিতে আসেন। প্রথমে তারা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে আসেন। কথা হচ্ছিল সেখানে বসেই। কিছুক্ষণ পর সমিতি সভাপতি মিজু আহমেদ প্রবীণ এ গুণী শিল্পীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুসলিম, আমীর আলী, লাবু আহমেদ। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর তাকে পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন-এর ছবির শুটিংয়ের চিত্র ও এফডিসি'র বিভিন্ন স্পট ঘুরিয়ে দেখান শিল্পী সমিতির সদস্যরা। 'সুন্দরী' ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সাইফুদ্দিন জাতীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন সময় ছোট বড়সহ মোট ১০০টি পুরস্কার পেয়েছেন। তার সহধর্মিণীর দেয়া তথ্য মতে, এখনও ক্যামেরা দেখলে ঝিলিক দিয়ে ওঠেন বহু চলচ্চিত্রে কমেডিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করা এই প্রবীণ শিল্পী। শুরু থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ছবিতে অভিনয় করেছেন সাইফুদ্দিন। তার শেষ ছবি ২০০৫ সালে তোজাম্মেল হক বকুলের 'চুড়িওয়ালা'। সবাক চলচ্চিত্রের একজন অংশীদার ও অভিনেতা হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রইবেন চিরদিন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment