'দেবদাস' নিয়ে গপ্পো

ভালো চলচ্চিত্র নিয়ে বরাবরই সেন্সর বোর্ড একটু বেশি মাতামাতি করে। তবে 'দেবদাস'-এর বেলায় এর মাত্রাটা যেন একটু বেশিই ছিল। চাষী নজরুল ইসলামের ছবি বলেই হয়তো এমনটা হয়েছে! কিছু অযৌক্তিক কারণে প্রায় ৯ মাস আটকে রাখা হয়েছিল রঙিন 'দেবদাস'কে। তবে আশার কথা হলো, মেঘ কেটে গেছে। আলোর দেখা পেয়েছে ছবিটি। অবশেষে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাচ্ছে নতুন 'দেবদাস'। গত ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চাষী নজরুল ইসলামের 'দেবদাস' ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে অন্যান্য ছবির ভিড়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এই ছবি দেখার জন্য সময় বের করতে পারেনি। অবশেষে ১৪ দিন অপেক্ষার পর ১৯ জানুয়ারি বিকেলে বোর্ডের সদস্যরা ছবিটি দেখেন। এতে শাকিব খান, অপু বিশ্বাস ও মৌসুমীর অভিনয়ের প্রশংসা করেন তারা। শুধু তা-ই নয়, অনেকদিন পর সবাই একটি ভালো ছবিও দেখলেন জানিয়ে পরিচালককে সাধুবাদ জানান। এজন্য চাষী বেশ উৎসাহ পেয়েছিলেন। ভেবেছিলেন বিনা কর্তনেই এটি ছাড়পত্র পাবে। কিন্তু তা আর হয়নি। হঠাৎ বোর্ডের কিছু সদস্য বাদ সাধেন। চুনিলাল চরিত্রের অভিনয়শিল্পীর পোশাককে কেন্দ্র করে আটকে যায় 'দেবদাস। এই চরিত্রে অভিনয় করেন শহীদুজ্জামান সেলিম। তার গায়ে থাকা রঙিন কোট নিয়ে আপত্তি তোলে সেন্সর বোর্ড। তাই দৃশ্যগুলো কর্তন না করা হলে 'দেবদাস' আলোর মুখ দেখবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডকে নিয়ে চাষী সেন্সর বোর্ডের আপীল বিভাগের দ্বারস্থ হন। এই বিভাগের সদস্যদের সদিচ্ছার সুবাদেই শেষ পর্যন্ত সব বিতর্কের অবসান ঘটেছে। দু'একদিনের মধ্যেই ছাড়পত্র পাবে রঙিন 'দেবদাস'। এজন্য আপীল বিভাগের সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চাষী নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'এখন প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির মুক্তি নিয়ে ভাবছি আমরা।'
জানা গেছে, 'দেবদাস' মুক্তির সময় নির্ধারণ করে ফেলেছেন নির্মাতারা। একসঙ্গে দুই উৎসব কোরবানির ঈদ ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে মুক্তি দেওয়া হবে ছবিটি। এ প্রসঙ্গে চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, "এত কাছাকাছি সময়ে দুটি বড় উৎসব সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই 'দেবদাস' মুক্তি দেওয়ার জন্য আমরা এই সময়কে বেছে নিয়েছি।"
আশির দশকে বুলবুল আহমেদ, কবরী, আনোয়ারা ও রহমানকে নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে 'দেবদাস' ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ওটা ছিল সাদাকালো। আবারও একই কাহিনী নিয়ে ছবি তৈরি করলেন তিনি। এবারের ছবিটি রঙিন। শাকিব খান, মৌসুমী, অপু বিশ্বাস ও শহীদুজ্জামান সেলিমকে নিয়ে 'দেবদাস' ছবির দৃশ্যধারণ শুরু হয় ২০১০ সালে। শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, 'অযৌক্তিক কারণে এতদিন আটকে ছিল 'দেবদাস'। এতে চুনিলালের গায়ে 'মুজিব কোট' থাকার কারণে ছবিটি আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু মুজিব কোটের রঙ হলো কালো। আমি পরেছিলাম লাল কোটি। তবুও অযৌক্তিক কারণে বাক্সবন্দি ছিল 'দেবদাস'। এমন একটি ভালো ছবি এতদিন বাক্সবন্দি ছিল, এটা ভাবতেই অবাক লাগে!'
চন্দ্রমুখী চরিত্রের অভিনেত্রী মৌসুমী বলেন, 'শুনলাম দেবদাসের সব ঝামেলা মিটে গেছে। এখন আর ছবিটি মুক্তির ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকল না। 'দেবদাস' অসম্ভব সুন্দর একটি ছবি।'
'দেবদাস' চরিত্রে অভিনয়ের পর শাকিব খান বলেছেন, 'আমার এক যুগের ক্যারিয়ারে এমন ছবি খুব কমই করা হয়েছে। এখানে আমি দেবদাসের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। সচরাচর আমি যে ধাঁচের ছবিতে অভিনয় করি, তার থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ছিল এ চরিত্রটি। তার পরও পরিচালকের সহযোগিতায় চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দিতে।'
পার্বতী চরিত্রের অভিনয়শিল্পী অপু বিশ্বাস বলেন, "শরৎচন্দ্রের 'দেবদাস' উপন্যাসটি পড়েছি অনেক আগে। বলিউডে শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিত ও ঐশ্বরিয়া রাইয়ের 'দেবদাস' দেখেছি, কখনো ভাবিনি এমন গল্পের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাবো। আশা করছি, ভক্তদের অনেকদিন পর একটি ভালো ছবি উপহার দিতে পারব।'

No comments:

Post a Comment